জগতে সবচে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। দুনিয়াতে প্রায় সবকিছুরই বিকল্প আছে, শুধু নেই ঈমানের বিকল্প।
দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কতশত আয়োজন করি। কত চিন্তা-ফিকির করি। কিন্তু যে ঈমান আমাদেরকে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা বানাবে, যে ঈমান আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে; সে ঈমানের নিরাপত্তার জন্য, সে ঈমানকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা কী ফিকির করেছি?
আমাদের অবস্থা তো এমন, কোন কাজে ঈমান নষ্ট হয়, কী কারণে মানুষ কাফেরে পরিণত হয়; সে সম্পর্কেও আমরা গাফিল। অথচ তার চেয়ে বড় দুর্ভাগা আর কে হতে পারে; যে ঈমানের মত নেয়ামত অর্জনের পরে, অজ্ঞতাবশত বা ইচ্ছাকৃত সে নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়!!
***
মুসলিম সমাজে আজ ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো বেশ অবহেলিত। ঈমান-আকীদা, তাওহীদ-শিরক, প্রভৃতি বিষয়ে রয়েছে অজ্ঞতার ছড়াছড়ি। তাওহীদি জনতা তাওহীদ জানেনা। মুসলিম জনসাধারণ জানেনা ইসলামের মৌলিক বিষয়। ঈমানদাররা জানেনা– ঈমান ভঙ্গের কারণ! এতো বড় আফসোসের কথা।
আমরা ওজু ভঙ্গের কারণ জানি। নামাজ ভঙ্গের কারণ জানি। রোজা নষ্টের কারণ জানি। কিন্তু নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাতসহ যাবতীয় আ’মাল কবুল হওয়ার প্রধান যে শর্ত– ঈমান; সে ঈমান ভঙ্গের কারণ জানিনা। অনেক আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, অনেক আহলুল ইলম নাওয়াকিদুল ঈমান বিষয়ে অস্পষ্টতায় ভুগেন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
***
ঈমান নষ্ট হবার কারণসমূহ থেকে মৌলিক কারণগুলো নিয়ে মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ একটি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন ‘নাওয়াকিদুল ইসলাম’। যেসব বিষয় মানুষকে ইসলামের পবিত্র সীমানা থেকে বের করে দেয়, সেসব কারণ থেকে দশটি গুরুত্বপূর্ণ কারণকে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে পয়েন্ট আকারে তার বইয়ে উপস্থাপন করেছেন।
আজকের আলোচ্য বইটি উক্ত বইয়ের ব্যাখ্যা গ্রন্থ। আসুন, বইটি সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু জেনে নেই।
বইয়ের শুরুতে উৎসর্গপত্র পড়ে যে কেউ একটা ইমোশনাল ধাক্কা খেতে পারেন। বেশ হৃদয়গ্রাহী একটি কথা আছে এখানে। যা আমাদের মত গাফলতে লিপ্ত থাকা মুসলিমদের গাইরত জাগিয়ে তোলার জন্যও ফলপ্রসূ হবে।
বইয়ের শুরুতে শাইখ হারুন ইজহার হাফিজাহুল্লাহ’র একটি মূল্যায়নপত্র রয়েছে। তাতে তিনি ঈমান-আকীদার গুরুত্ব, আকিদার কিছু বিষয়ে আমাদের সমাজের অবহেলা এবং আলোচিত গ্রন্থ সম্পর্কে দুইএকটি কথা বলেন।
এরপরেই সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর শুরু হয় মূল আলোচনা। ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণ ধারাবাহিকভাবে বইটিতে উল্লেখ করা হয়। প্রত্যেকটি কারণের সাবলীল ও দালিলিক সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন শাইখ সুলায়মান ইবনু নাসির আল উলওয়ান।
ঈমান নষ্টকারী কারণসমূহ কারোর থেকে প্রকাশ পেলেই যেন আমরা হুটহাট কাউকে তাকফির না করি; সে ব্যাপারেও বইয়ের শেষে রয়েছে বিশেষ সতর্কবার্তা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ ও শাইখ সুলায়মান ইবনু নাসির আল উলওয়ানের সংক্ষিপ্ত জীবনী দিয়ে সমাপ্ত করা হয়েছে বই।
***
বইয়ের পিছনে অনুবাদক-সম্পাদক ও প্রকাশক যে অনেক মেহনত করেছেন, তা একজন সচেতন পাঠকের কাছে খুব সহজেই ধরা পড়বে। কিছু জায়গায় অনুবাদক টীকাযুক্ত করে আলোচনাকে সমৃদ্ধ করেছেন। এটা প্রাথমিক পাঠকদের জন্য খুবই উপকারী হবে বলে আশা রাখি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যাকার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন, অনুবাদক-সম্পাদকও এই ব্যাপারে আলাদাভাবে কিছু বলেন নি। এই অংশগুলোতে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করলে বইটি আরো সমৃদ্ধ হতে বলে ধারণা। যেমনঃ শিরকের বিষয়। যদিও এখানে শিরকের বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সমাজের চলমান কিছু শিরকের ব্যাপার আলোচনায় আসেনি।
বইটি সুখপাঠ্য। ঝরঝরে অনুবাদ ও সাবলীল উপস্থাপন পাঠককে মুগ্ধ করবে। যারা ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ জানতে চান ও সংক্ষিপ্তভাবে এই বিষয়ের দলিল আত্মস্থ করতে চান; তাদের জন্য এই বইটি বেশ উপকারী হবে বলে আশা রাখি। বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় বইটি সবার পাঠের তালিকায় থাকা উচিত বলে মনে করি। আল্লাহ বইটির লেখক, অনুবাদক, পাঠকসহ সবাইকে উত্তম বিনিময় দিন।
.
বইয়ের নাম –
লেখক – শাইখ সুলায়মান ইবনু নাসির আল উলওয়ান, ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহ.
অনুবাদক – মাসউদ আলিমী
সম্পাদক – মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি হুমাইদ সাঈদ কাসেমী
প্রকাশনী – সীরাত পাবলিকেশন – Seerat Publication
পৃষ্ঠা – ১১২ পৃষ্ঠা
কভার – পেপার ব্যাক
বিষয় – ইসলামি আকিদা, ঈমান বা বিশ্বাস
Reviews
There are no reviews yet.