বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
Click Image for Gallery
বিষয়ভিত্তিক তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
প্রকাশনাঃ ইমাম পাবলিকেশন লিঃ
কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর। সাথে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শানে নুযুল ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা। কুরআন মাজীদে আলোচিত মৌলিক বিষয়সমুহকে ৫০টি পর্ব এবং ৫৭৫টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে।
গ্রন্থটির কিছু বৈশিষ্ট্য
১. এ গ্রন্থের মধ্যে কুরআন মাজীদে আলোচিত বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত আয়াতসমূহ বিভিন্ন স্থান থেকে খুঁজে বের করে একত্রে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
২. আয়াতগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন একটি আয়াত অন্য একটি আয়াতের সম্পূরক এবং ব্যাখ্যা। এজন্য এ গ্রন্থের নাম দেয়া হয়েছেÑ ‘তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআন’ অর্থাৎ কুরআন দিয়ে কুরআনের ব্যাখ্যা। কারণ, اَلْقُرْاٰنُ يُفَسِّرُ بَعْضُهٗ بَعْضًا- কুরআনের এক অংশ অন্য অংশের ব্যাখ্যা করে।
৩. এ তাফসীরটি পড়ে সকলেই এমনকি স্বল্পশিক্ষিত লোকেরাও বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য কী তা সহজে জেনে নিতে পারবেন।
৪. কোন বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত হতে যেসব মাসআলা বা পয়েন্ট বের হয় তা শিরোণাম আকারে লিখা হয়েছে এবং ঐ কথার দলীলস্বরূপ নিচে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আয়াতের সহজসরল বাংলা অনুবাদ দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এটা কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. আয়াত উল্লেখ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশটুকুই উল্লেখ করা হয়েছেÑ যাতে মুখস্থ করা ও দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়।
৬. কুরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেগুলোর শানে নুযূল বা ব্যাখ্যা না জানলে আয়াতের মর্ম বুঝা যায় না। সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
৭. অনেক ব্যাখ্যা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমে পাঠক কুরআনকে বাস্তবতার নিরিখে গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন।
৮. সম্মানিত ইমাম, খতীব, বক্তা ও দাঈগণ কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় প্রথমে ঐ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এ তাফসীরটি সকলের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবেÑ ইনশা-আল্লাহ।
৯. কুরআন মাজীদ হেফ্জ করার সাথে সাথে এ তাফসীরটিও পড়লে হাফিজ হওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধিবিধান সম্পর্কেও জানা যাবে।
১০. এ তাফসীরটি হাদীসের কিতাবের ন্যায় পর্ব ও অধ্যায় আকারে সাজানো হয়েছে। তাই পাঠক এ গ্রন্থের যে অধ্যায়টি পড়বেন সে অধ্যায়ের সাথে যে কোন হাদীস গ্রন্থের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টিও মিলিয়ে পড়লে ঐ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কুরআন মাজীদের তাফসীর করার মূলনীতি
কুরআন মাজীদের তাফসীর করার পাঁচটি মূলনীতি রয়েছে। আর তা হলো :
(১) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالْقُرْاٰنِ – কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা :
কুরআনের এক অংশ অপর অংশের তাফসীর করে। কেননা কুরআনের একটি আয়াত অপর আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে বিষয়টি কোন জায়গায় সংক্ষেপে বলা হয়েছে অন্য জায়গায় তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَللهُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِيْثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا
“আল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর বাণী কিতাব আকারে নাযিল করেছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।”
(সূরা যুমার- ২৩)
(২) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِالسُّنَّةِ – নবী ؓ এর হাদীসের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
রাসূল ؓ ছিলেন কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা। কেননা তাঁর উপর কুরআন নাযিল হয়েছে এবং কোন্ আয়াত দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন। নবী ؓ তাঁর জীবদ্দশায় কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে দিতেন। বর্তমানে এর ব্যাখ্যা হলো হাদীস গ্রন্থসমূহ। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَاَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ
“আমি তোমার প্রতি এ উপদেশবাণী নাযিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পার এবং তারাও যেন চিন্তাভাবনা করে।” (সূরা নাহল- ৪৪)
(৩) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ الصَّحَابَةِ – সাহাবীগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা তারা রাসূল ؓ এর ছাত্র ছিলেন এবং রাসূল ؓ এর ব্যাখ্যার আলোকেই তারা কুরআনের ব্যাখ্যা করেছেন।
(৪) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِاَقْوَالِ التَّابِعِيْنَ – তাবেঈগণের উক্তির মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করা :
কারণ তারা সাহাবীগণের নিকট থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন। নবী ؓ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ
“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক হলো আমার যুগের লোক; অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। তারপর যারা তাদের পরে আসবে, তারপর তাদের পরে যারা আসবে।” অর্থাৎ যথাক্রমে তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈনগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
(সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২; সহীহ মুসলিম, হা/৬৬৩২)
(৫) تَفْسِيْرُ الْقُرْاٰنِ بِمَا تَقْتَضِيْهِ اللُّغَةُ الْعَرَبِيَّةُ – আরবি ভাষার চাহিদার আলোকে কুরআনের তাফসীর করা :
কেননা আল্লাহ তা‘আলা আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
اِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ
আমি এটা আরবি ভাষায় কুরআনরূপে (অবতীর্ণ) করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
(সূরা যুখরুফ- ৩)